বাসে ডাকাতি-ধর্ষণে জড়িতদের ছয়জনই সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ

বাসে ডাকাতি-ধর্ষণে জড়িতদের ছয়জনই সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ

 


টাঙ্গাইলের মহাসড়কে চলন্ত বাসে ডাকাতি এবং এক নারীকে ‘দলবেঁধে ধর্ষণের’ ঘটনায় যে ১০ জনকে র‌্যাব গ্রেফতার করেছে, তাদের বেশিরভাগই সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ বলে জানিয়েছে র‌্যাব। 


 র‌্যাবের ভাষ্যমতে, গ্রেফতার ১০ জনের মধ্যে ছয়জনের বয়স ১৮ থেকে ২১ বছরের মধ্যে, তিনজনের বয়স ২২ থেকে ২৪ বছর। এছাড়া ৩২ বছর বয়সী একজনও রয়েছেন। তারা সবাই বিভিন্ন পরিবহন এবং পোশাক কারখানায় কাজ করেন।  



ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে ১০ ব্যক্তিকে গ্রেফতারের পর সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানায় র‍্যাব। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।


সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল রোববার ঢাকা, সাভার, গাজীপুর, সিরাজগঞ্জ, সাভার ও টাঙ্গাইলে অভিযান চালিয়ে ডাকাত চক্রটির ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। এদের মধ্যে মূল পরিকল্পনাকারীও রয়েছেন।


র‍্যাবের বিবরণ অনুযায়ী গ্রেফতার ব্যক্তিরা হলেন- মো. রতন হোসেন, মো. আলাউদ্দিন, সোহাগ মণ্ডল, খন্দকার মো. হাসমত আলী, বাবু হোসেন, মো. জীবন, আবদুল মান্নান, নাঈম সরকার, রাসেল তালুকদার ও আসলাম তালুকদার। তাঁদের মধ্যে রতন মূল পরিকল্পনাকারী। তার বিরুদ্ধে ডাকাতির একাধিক মামলা রয়েছে।


তাদের কাছ থেকে ২০টি মোবাইল ফোন, দুটি রুপার চুড়ি, ১৪টি সিমকার্ড এবং ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি ক্ষুর উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব।


এক সপ্তাহ আগের ওই ঘটনায় টাঙ্গাইল জেলা পুলিশও তিনজনকে গ্রেফতার করেছে। তারা হলেন- রাজা মিয়া, আব্দুল আউয়াল এবং নূর নবী।


কমান্ডার আল মঈন বলেন, এই ডাকাতির ‘পরিকল্পনা ও নেতৃত্বে’ ছিলেন ২১ বছর বয়সী রতন হোসেন, যিনি বাসের হেল্পার হিসেবে কাজ করেন।


ডাকাতির তিন দিন আগে রতন তার সহযোগী রাজা মিয়াকে এই পরিকল্পনা জানিয়ে ডাকাতির প্রস্তাব দেয়। এরপর মান্নান, জীবন, দীপু, আউয়াল ও নুরনবীকে পরিকল্পনার কথা জানায় রতন। তাদের মধ্যে মান্নান ঢাকার জিরানীবাজার এলাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। তিনি পরে সোহাগ, আসলাম, রাসেল, নাঈম ও আলাউদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে ডাকাতিতে যুক্ত হন।


রতনের নেতৃত্বে মোট ১৩ জন ডাকাতিতে অংশ নেয় জানিয়ে র‌্যাব কর্মকর্তা বলেন, ডাকাতির প্রাথমিক খরচ মেটানোর জন্য রতন পাঁচ হাজার টাকা লগ্নি করেন। চক্রের সদস্যদের ছোট ছোট দলে বিভক্ত করে প্রত্যেকের কাজ বুঝিয়ে দেওয়া হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী, রতন ২ আগস্ট রাতে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা মোড়ের একটি দোকান থেকে চারটি চাকু, দুটি ধারালো কাঁচি এবং একটি ক্ষুর সংগ্রহ করে।


সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওই রাতে সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় ঘোরাঘুরি করতে থাকে ডাকাত দলের সদস্যরা। রাত আনুমানিক ১টার দিকে কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল এক্সপ্রেস পরিবহনের বাসটি সিরাজগঞ্জ রোড মোড় এলাকায় পৌঁছালে ডাকাত রাজা বাসটিকে থামার সংকেত দেন। যাত্রীবেশে প্রথমে রতন, রাজা, মান্নান ও নুরনবী বাসে ওঠেন। পরে আরো দুই দফায় ডাকাতচক্রের অন্য সদস্যরা বাসে ওঠেন।


খন্দকার আল মঈন বলেন, সব ধরনের প্রস্তুতি শেষে ডাকাত দলের সদস্যরা বাসে ডাকাতের উদ্দেশ্যে সিরাজগঞ্জ মোড়ে অবস্থান নেন। যাত্রীবেশে রতন, রাজা, মান্নান ও নূর নবী বাসটিতে ওঠেন। পরে আরও দুই দফায় এ চক্রের বাকি সদস্যরা যাত্রী সেজে বাসে ওঠেন। তারা বাসের পেছনের বিভিন্ন ফাঁকা সিটে অবস্থান নেন। বাসটি বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতু অতিক্রম করলে রতনসহ অন্যরা চালক ও তার সহকারীকে বেঁধে ফেলেন। তারা বাসের নিয়ন্ত্রণ নেন। পরে তারা দেশীয় অস্ত্রের মুখে বাসের যাত্রীদের হাত, পা ও চোখ বেঁধে ফেলেন।


র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক বলেন, নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শুরুর দিকে রতন বাসটি চালাতে থাকেন। এলেঙ্গা এলাকায় আসার পর রতন চালকের সিট থেকে উঠে যান। তাঁর স্থলে চালকের সিটে বসে বাস চালাতে থাকেন রাজু। তারা একে একে সব যাত্রীর কাছ থেকে নগদ অর্থ, মুঠোফোন ও অলংকার ছিনিয়ে নেন। একপর্যায়ে তারা বাসে থাকা এক নারীকে ধর্ষণ করেন। একাধিক নারী যাত্রীকে তারা শ্লীলতাহানি করেন।


0 Response to "বাসে ডাকাতি-ধর্ষণে জড়িতদের ছয়জনই সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ"

Post a Comment

Iklan Atas Artikel

Iklan Tengah Artikel 1

Iklan Tengah Artikel 2

Iklan Bawah Artikel